জেলা প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের মধ্যনগর ইউপির এক সদস্য ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিডি) কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে স্থানীয় বনগাঁও গ্রামের কল্পনা আক্তারের কাছ থেকে দুই বছর আগে নিয়েছিলেন জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি। এরপর কয়েক দফা যোগাযোগের পর কল্পনাকে জানানো হয়, কার্ড করা সম্ভব হয়নি। পরে ঢাকায় ছেলেদের কাছে চলে যান ওই নারী। এর মধ্যে সর্বশেষ নির্বাচনে ওই ইউপির একটি ওয়ার্ডে সদস্য নির্বাচিত হন কল্পনার ভাগ্নে।
গত শনিবার ভিজিডির উপকারভোগীদের মধ্যে চাল বিতরণ করা হয় নবনির্বাচিত পরিষদ সদস্যদের অধীনে। ওই সময় কল্পনার ভাগ্নে দেখতে পান তার নামে কার্ড রয়েছে, তবে সেই চাল তুলছেন বনগাঁও গ্রামের লিটন তালুকদারের স্ত্রী রাজিয়া বেগম।
বিষয়টি জানার পর গত সোমবার ইউনিয়ন পরিষদে যান কল্পনা। সেখানে জানতে পারেন, রাজিয়া গত ১৩ মাস ধরে তার কার্ড ব্যবহার করে চাল উত্তোলন করে আসছেন। শনিবারও তার কার্ড ব্যবহার করে চাল নেওয়া হয়েছে।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য সজলু মিয়াও জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমি কল্পনাকে কার্ড করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কার্ড করতে পারিনি। কিছুদিন পরে দেখি কল্পনার নামে কার্ড হয়েছে, কিন্তু লিটনকে চাল দেওয়া হচ্ছে। শুনেছি, কল্পনার স্বামী ও লিটন মিয়ার মধ্যে আপস হয়েছিল। তবে কল্পনার স্বামী নূর মিয়া জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। আর রাজিয়ার স্বামী লিটন তালুকদারের দাবি, তার কাছে কারও কার্ড নেই।
শুধু কল্পনা নয়, ওই ইউপিতে একইভাবে আরও কয়েকজনের নামে কার্ড করে অন্যরা চাল নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনলাইন তালিকা অনুযায়ী, ওই ইউপির ৬৪ নম্বর কার্ডধারী ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াগাঁও গ্রামের শিপ্রা রানী দত্ত, ১৮৩ নম্বর কার্ডধারী ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জালালপুর গ্রামের অনিতা দেবী, অনলাইন ও মাস্টাররোলে ১২৩ নম্বর কার্ডধারী ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কামাউড়া গ্রামের স্ত্রী লক্ষ্মী রানী। তবে তারা কেউই নিজেদের নামে কার্ড হওয়ার তথ্য জানেন না।
গত ১৩ মাস ধরে শিপ্রার কার্ডে বনগাঁও গ্রামের রাজিয়া বেগম, অনিতার পরিবর্তে তেলিপাড়া গ্রামের ডলি আক্তার, লক্ষ্মী রানীর চাল আমেনা আক্তার নামের একজন উত্তোলন করে আসছেন। এসব কার্ডের বিপরীতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে ১৩ মাসে ১ হাজার ৫৬০ কেজি চাল উত্তোলন করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপকারভোগীর কাছে কার্ড থাকার কথা থাকলেও মধ্যনগর ইউপিতে সাবেক চেয়ারম্যান প্রবীর বিজয় তালুকদারের তত্ত্বাবধানে এগুলো রাখা হতো। শুধু চাল বিতরণের সময় কার্ডগুলো উপকারভোগীদের দেওয়া হতো। এতে প্রকৃতি উপকারভোগীদের কাছে কার্ড পৌঁছাত না। একজনের কার্ড ব্যবহার করে অন্যজনের চাল নেওয়ার সুযোগও তৈরি হয়।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি সচিব রুহুল আমিনের দাবি, সাবেক চেয়ারম্যান প্রবীর বিজয়ের পাশাপাশি ইউপি সদস্য আরশাদ মিয়ার জিম্মায় কার্ডগুলো জমা থাকত। তিনি চাল বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নিতেন না। গত ১৩ মাসে কোনো কার্ডে আমি স্বাক্ষরও করিনি।
প্রবীর বিজয় কার্ড নিজের কাছে রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, হাতে হাতে কার্ডগুলো দিলে অনেক সময় হারিয়ে যেত। তবে আরশাদ মেম্বারের কাছে নয়, আমার কাছে অথবা সচিবের কাছে কার্ডগুলো জমা থাকত। চাল দেওয়ার পর কার্ডগুলো অফিসে রেখে দিতাম এবং সাইন করতাম।
মধ্যনগর ইউপি চেয়ারম্যান সঞ্জীব রঞ্জন তালুকদার টিটু বলেন, আর যাতে কোনো প্রকৃত কার্ডধারী বঞ্চিত না হন, সেই বিষয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির হাসান বলেন, প্রকৃত কার্ডধারীরা যদি তাদের কার্ড সম্পর্কে না জানেন এবং ভিজিডির চাল না পেয়ে থাকেন, সেটি অন্যায়। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্নিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।